ডিপ্রেশন থেকেও কিন্তু আমরা অনেক কিছু নতুন নতুন শিখতে পারি, ডিপ্রেশন হলে কীভাবে নিজেকে ভালো রাখা যায়।

ওয়েলকাম টু হেলথ ইনসাইট সাইকোলজিস্ট পায়েল ঘোষ অ্যান্ড অ্যাডিকশন কনসালট্যান্ট। আজকে আমরা একটু আলোচনা করব যে, মন খারাপ হলে, ডিপ্রেশন হলে কীভাবে নিজেকে ভালো রাখা যায়। উইদাউট প্রফেশনাল হেল্প বা কখন আমরা প্রফেশনাল হেল্প নেব সেই জায়গাটা নিয়ে একটু আলোচনা করব। সেটা হচ্ছে ডিপ্রেশন মানেই যে মন খারাপ বা সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে সেটা নয়।

ডিপ্রেশন থেকেও কিন্তু আমরা অনেক কিছু নতুন নতুন শিখতে পারি। যেরকম ডিপ্রেশন হলে আমরা যেরকম একা হয়ে যাই, একা যখন নিজে থাকতে শুরু করি তখন হয়ত অনেক কিছু আবিষ্কার করি। যেরকম একটা মানুষ হয়ত একটা খাতা পেন নিয়ে বসল। সে হয়তো ভাবল কিছু লিখবে। সেখান থেকে দেখল যে সে একটা সুন্দর ছবি এঁকে ফেলল বা ক্রিয়েটিভ কোনো কাজকর্ম করে ফেলল।

 তো সেই কোয়ালিটি টা হয়তো তার মধ্যে এতদিন ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল, সেটা হয়ত সে নিজেও জানত না। তো সে যখন ডিপ্রেশনে এলো এবং সে যখন কিছু একটা করতে চাইল তখন কিন্তু তার এই ইনার কোয়ালিটি টাও সামনে বেরিয়ে এল। সে তারপর এটাতে ফোকাস করলে এইভাবে সে ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। ডিপ্রেশন মানেই যে সবসময় খারাপ থাকা সেটা নয়।

 এছাড়া ডিপ্রেশন হলে আমরা যেরকম ছোটোখাটো কিছু এক্টিভিটির মাধ্যমে নিজেকে ভালো রাখতে পারি, সেটা নিজেকে যদি একটু চার্মিং রাখতে পারি, মানে ফ্রেন্ডস, বন্ধুবান্ধব সবার সাথে যদি একটু নিজেকে কানেক্টেড করে রাখতে পারি, সেটা ভিডিও কল হতে পারে, ফোন কল, হতে পারে পুরনো বন্ধুবান্ধব বা ফ্যামিলির রিলেটিভ।

 যারা আমাদের খুব ক্লোজ, তারা কিন্তু আমাদের এই ডিপ্রেশনের সময়টায় খুব ভালো ভাবে একটা সাপোর্ট দেয়, মেন্টাল সাপোর্ট দেয় যার জন্য আমাদের মনটা ভালো থাকে। সেকেন্ড হচ্ছে আমি যদি একা একটু নিজের সাথে নিজে সময় কাটাই, যেরকম বাইরে যদি আমরা হাঁটতে যাই সেই ক্ষেত্রে এই যে একা আমি বাইরে বেরোচ্ছি বা যে বাইরে হাঁটতে যাচ্ছি, এইটা কিন্তু আমার মুখটাকে একটু লিফট করছে, আমার মোটিভেশন টাকেও অ্যানাউন্স করছে। থার্ড হচ্ছে সানলাইট এক্সপোজার। 

যতটা সম্ভব আমি ডিপ্রেশনে থাকাকালীন একটু সানলাইট এর সাথে সময় কাটাবো। ও দিনে তিরিশ মিনিট হলেও সানলাইট থেকে আমরা যে ভিটামিন ডি পাচ্ছি সেটা কিন্তু ডিপ্রেশন কাটাতে খুব ভীষণভাবে হেল্প করে। ফোর্থ হচ্ছে কিছু অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে আমরা সেই ডিপ্রেশনের জায়গাটাকে মাত্রা টাকে কমিয়ে আনতে পারি, যেরকম গান শুনতে পারি। গান শুনলে আমাদের যে হরমোন থাকে, হ্যাপি হরমোন অক্সিটোসিন সেটা কিন্তু রিলিজ হয় গান।

 যখন আমরা শুনছি, আমাদের যে অক্সিটোসিন রিলিজ হচ্ছে তখন সেই অক্সিটোসিন আমাদের হেল্প করে কি না অন্যদের সাথে কানেক্টেড রাখতে, বন্ডিং গুলোকে বাড়াতে। তো ডিপ্রেশনে থাকলে আমরা যেরকম একটা সোশাল উইথড্রল হয়ে যাই, সোশাল সিচুয়েশন থেকে সরে আসি। ঐ অক্সিটোসিন যখন আমাদের মধ্যে বাড়ছে, হ্যাপি হরমোন। 

এটাকে আমরা হরমোন বলি, তখন কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা চেঞ্জ তৈরি হয়। আমরা কিন্তু আস্তে আস্তে আরো বেশি স্পেশালাইজড হয়েই সবার সাথে কথা বলতে স্টার্ট করি। এছাড়া গান করে বা কোনরকম মিউজিকের মাধ্যমে আমার যদি ইমোশন টা আমি এক্সপ্রেস করি। অনেকে আছে যে গান শুনে মানে স্যাড শুনে হয়তো নিজের ইমোশন বা কষ্টটাকে হয়তো বার করছে বা কোন একটা সেট করে সে হয়তো স্যাড এর মাধ্যমে নিজের কষ্টটাকে বার করছে। 

ঐ গ্রুপটাকে কিন্তু খুব ভালো ভাবে এক্সপ্রেস করা যায় গানের মাধ্যমে। এছাড়া যেটা করা যেতে পারে সেটা হচ্ছে আমি বাড়ি যাই। আমার রেগুলার একটিভিটি থাকছে। সেগুলো তো ডিপ্রেশনের কারণে লস অফ ইন্টারেস্ট এর জন্য সে একটিভিটি গুলো করতে ইচ্ছে করে না। 

তো সেই জায়গায় আমি ছোটখাটো একটা দুটো এক্টিভিটি করার পর নিজেকে একটু সেল্ফ ট্রিট। যদি নিজের একটা ভালোলাগা পছন্দের খাবার একটু বানিয়ে খেলাম, একটা হয়তো কফি খেলাম, একটা হয়তো কোল্ড ড্রিংকস খেলাম। 

এই রকম ছোটখাটো এক্টিভিটির পর নিজেকে যদি সেল্ফ ট্রিট দি, ঠিক যেইভাবে আমরা অন্যদের ট্রিট দিই, সেরকমভাবে নিজেকে ট্রিট দিলে কিন্তু আমার মনটাও আপসেট হয়। ফোর্থ হচ্ছে যেটা, সেটা হচ্ছে যে, যখন আমাদের ডিপ্রেশন থাকে তখন আমরা হাসতে ভুলে যাই। আমরা যেটা বলি যে জোরে জোরে হাসো, তার মানে এই নয় যে আমি অকারণে জোরে জোরে হাসব।

 সেই সময়টা কী করতে পারি? আমি সিলি কিছু মুভি দেখতে পারি বা জোকস দেখতে পারি, ভিডিও দেখতে পারি, যেইটা আমার হাসির একটা কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অনেকে কার্টুন দেখতে খুব পছন্দ করে। তো এই কার্টুনের জায়গাগুলো দেখে বা ওই কার্টুন ফিগার গুলো দেখে যে স্টোরিটা থাকে। 

এই ধরনের কিছু দেখলে আমরা কিন্তু নিজের মুখটাকে এনাউন্স করতে পারি এবং হাসতে আমাদের সাহায্য করে। নেক্সট হচ্ছে রিড বুক এই নয় যে আমাকে মোটিভেশনাল কিছু পড়তে হবে। আমি যে কোনো কিছু পড়তে পারি। বই পড়ার মাধ্যমে কী হয়? আমাদের যেই মোটিভেশন লেভেলটা থাকে বা স্পিরিচুয়াল পাওয়ারটা থাকে সেটা আস্তে আস্তে বাড়ে এবং আমাদের মুখটাও অনেক চেঞ্জ হয়। 

নেক্সট হচ্ছে যে হেলদি ইট আমরা হেলদি ডায়েট মেন্টেন করে যদি খাই, যেরকম ফুড, ভেজিটেবল এগুলো যদি খাই, আমাদের শরীরে যেই ভিটামিন মিনারেলস গুলো যাচ্ছে সেগুলো বা ভিটামিন ডি জাতীয় যে জিনিসগুলো খাবারের মাধ্যমে যাচ্ছে সেখান থেকে কিন্তু আমাদের ডিপ্রেশনের লেভেলটা অনেকটা কম হয়ে যায়। এছাড়া ঘুম। 

প্রপার স্লিপ হাইজিন মেনটেন করে আমরা যদি ঘুমোই মানে ঘুমের একটা নির্দিষ্ট যদি সময় করে নিই। প্রত্যেকদিন এগারোটায় যদি ঘুমোতে যাই, এই নয় যে আজ এগারোটা, কাল বারোটা বা পরশু দশটা এই রকম নয়। একটা প্রপার টাইম মেনটেন করে আমরা যদি ঘুমোতে যায় এবং একটা টাইম মেনটেন করে যদি আমরা ঘুম থেকে উঠি। এছাড়া ঘুমের একঘন্টা আগে আমরা যদি স্ক্রিন টাইম গুলোকে অ্যাভয়েড

করতে পারি, যেরকম ফোন দেখা, ল্যাপটপ দেখা বা টিভি দেখা এইগুলো থেকে যদি আমরা নিজেকে একটু বিরত রাখতে পারি। এছাড়া ঘুমের ঠিক তিন চার ঘণ্টা আগে থেকে আমরা যদি স্টিমিট ড্রিংক গুলোকে অ্যাভয়েড করি, যেরকম ক্যাফেইন হতে পারে, অ্যালকোহল হতে পারে, চা হতে পারে এগুলো খেলে আমরা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে এক্সাইটেড হয়ে পড়ি।

 আমাদের একটা এনার্জি বুস্ট হয়ে যায় তো? সেইগুলো তো ঘুমের জন্য ব্যাঘাত ঘটায়। তো আমরা যদি ঘুমের তিন চার ঘণ্টা আগে থেকেই এগুলো খাওয়া বন্ধ করি, প্লাস ঘুমের জন্য একটা প্রপার সেলসিয়াস খুব কাজে লাগে। মানে রুম টেম্পারেচার টা আমাকে খুব সিলেক্টিভ রাখতে হবে। এইটিন ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 2 ডিগ্রি সেলসিয়াস ঘুমের জন্য। 

তো আমরা যখন ঘুমোই আমাদের কিন্তু বডি টেম্পারেচার আস্তে আস্তে ফল করতে থাকে। আমার এইজন্য রুম টেম্পারেচার থাকে সেইভাবে অ্যাডজাস্ট করে রাখতে হবে যাতে ঘুমের সময় কোনো ডিস্টার্ব চান্স না তৈরি হয় আমার ইনার টেম্পারেচার এর জন্য। 

এছাড়া আরেকটা করা যেতে পারে সেটা হচ্ছে যে কিছু শ্যুটিং মিউজিক। আমি যদি ঘুমের টাইম চালিয়ে ঘুমোই যাদের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে বা ঘুম আসতে দেরি হচ্ছে। এই ছোট খাটো অ্যাক্টিভিটি গুলোর মাধ্যমে কিন্তু আমরা ঘুমের জায়গাটাকে এনহ্যান্সড করতে পারি এবং ঘুমের যে সমস্যা হয়। অনেকেরই দেখা যায় যে বারোটা বেজে গেলো, একটা বেজে গেলো, বার বার ঘড়ি দেখছে আমাকে কাল সকালে উঠতে হবে। এত কাজ আছে?

দুটো বেজে গেল। আমি এখনও ঘুমোতে পারলাম না। এই জায়গাটাকে অ্যাভয়েড করা মানে বেডরুমে আপনাকে ক্লক যদি থাকে সেটাকে আপনাকে রিমুভ করে রাখতে হবে। অন্য কোন ঘরে রাখতে হবে। বার বার ঘড়ি দেখলে কিন্তু আমাদের অ্যাংজাইটি লেভেলটা বেড়ে যায়। তাতে কিন্তু ঘুম আসতে আরও বেশি সমস্যা হয়।

 তো এই কয়েকটা টিপস মেনে প্রপার স্লিপ হাইজিন মেনটেন করে আমি যদি ঘুম টাকে ঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি তাহলে কিন্তু খুব ভালো হবে। এইভাবে যদি প্রপার আমরা ঘুম টাকে মেনটেন করি তাহলে দেখা যাবে যে আমার ঘুমোতে কিন্তু খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না বা স্লিপ হাইজিন মেনটেন করে ঘুমোলে কিন্তু ডিপ্রেশনের লেভেল টাও অনেকটা কম হয়।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url