কোরবানি ঈদ ২০২৪ কত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে - কোরবানি করার সকল নিয়মাবলী

 আমাদের সবারই বেশি আগ্রহ থাকে কোরবানি ঈদ নিয়ে। আমরা সবাই জানি আমাদের মুসলিম ধর্মালম্বিদের জন্য বছরে ২ টি খুশির দিন আসে একটি হলো ঈদুল ফিতর আরেকটি হলো ঈদুল আযহা। আমাদের উৎসব গুলো আমরা সবাই পালন করে থাকি। তাই প্রতি বারের মতো এবারো আমাদের মাঝে ঈদুল আযহা ফিরে এসেছে । আমরা সবাই জানি পবিত্র ঈদুল আযহায় আমাদের কোরবানি করতে হয়। আমাদের মুসলিমদের মধ্যে যাদের সামর্থ আছে তারা কোরবানি করে থাকে বিভিন্ন পশু যেমন- গরু ছাগল ভেরা ইত্যাদি। আর যাদের সামর্থ নেই কোরবানি দেওয়ার মতো তারা দেই না। 


তাই আজ আমরা কোরবানি ঈদ ২০২৪ কত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে এবং কোরবানি করার সকল নিয়ম-কানুন সম্বন্ধে আপনাদের জানাবো তো চলুন শুরু করা যাক। কোরবানি মহান আল্লাহর একটি সন্তুষ্টির মাধ্যম কোরবানির গোস্ত-চামরা কিছুই আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌছে না শুধু মাত্র মনের আশা আকাঙ্কা এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য লাভ হয়ে থাকে । আজ আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।

কোরবানির নিয়মপোষ্টসূচিঃ

ঈদুল আযহা ২০২৪ কত তারিখে 

আমরা জানি এবার ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদ জুন মাসের ১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও এটা সম্পুর্ন চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। যদি বাংলাদেশের আকাশে ১৬ জুন মাগরিবের সময় চাঁদ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের কোরবানি ১৭ তারিখে করতে হবে। আর যদি ১৬ জুন দিবা গত রাতে চাঁদ দেখা না যায় তাহলে আমাদের কোরবানির ঈদ ১ দিন পিছিয়ে যেতে পারে।

যদিও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সৌদির সময় কে বিবেচনা করে ঈদ পালন করে থাকে। যেমন- যদি সৌদিতে ১৬ জুন ঈদ পালন করে থাকে তাহলে আমাদের বাংলাদেশে তার পরদিন অর্থাৎ ১৭ জুন ঈদ পালন করতে হবে। আর যদি সৌদি আরব ১৭ ই জুন ঈদ উদযাপন করে থাকে তাহলে আমাদের ১৮ ই জুন পবিত্র ঈদুল আযহা পালন করতে হবে। তবে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে পবিত্র ঈদুল আযহা ১৭ ই জুন অনুষ্ঠিত হবে।

কোরবানি করার আগে যে কাজ গুলো করা আবশ্যক

এখন আমরা জানবো কোরবানি করার আগে যে কাজ গুলো করা আবশ্যক সেই বিষয়ে। কেননা আপনি যদি মন থেকে কোরবানি করার নিয়ত করেন তাহলে আপনার যে নিয়ম গুলো মানতে হবে। তা নিচের ছকে আলোচনা করা হলো। আপনি যদি এই নিয়ম গুলো মনোযোগ সহকারে মানতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার কোরবানি মহান আল্লার সন্তুষ্টি লাভ করবে।
  • কোরবানি করার খাছ নিয়ত করতে হবে।
  • কোরবানির পশুকে নিয়মিত ভালোভাবে খাওয়াতে হবে।
  • কোরবানি ঈদের প্রথম সপ্তাহে হাত পায়ের নখ এবং চুল কাটা যাবে নাহ। 
  • কোরবানির পশু সুস্থ্য সবল এবং মোটা তাজা থাকতে হবে।
  • কোরবানির পশু কেনার টাকা সৎ এবং হালাল উপার্জনে হতে হবে।
  • কোরবানির মাংস খাওয়ার চাহিদা বেশি থাকা যাবে নাহ।
  • নিয়মিত নামাজ পড়তে হবে।
  • আল্লাহর কাছে ফরিয়াত বা দোয়া করতে হবে যাতে মহান আল্লাহ আপনার কোরবানি কবুল করেন।
কোরবানি করার আগে আপনাকে এই কাজ গুলো করতে হবে। নয়তো আপনার কোরবানি আল্লাহর কাছে নাও পৌছিতে পারে। তাই চেষ্ঠা করবেন সব সময় ভালো ভাবে থাকতে এবং পরিস্কার পরিছন্ন থাকতে।

কোরবানির দিন করনীয়

কোরবানির দিন খুব সকালে পাক পবিত্র হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। তারপর পরিবারের সাথে ভালো ভাবে হালাল আনন্দ করতে হবে। এছাড়াও কোরবানির দিন যে সকল কাজ গুলো করতে হবে তা নিচের ছকে উল্লেখ করা হলো ঃ
  • প্রথমে সকাল বেলা পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করতে হবে।
  • তারপর পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটাতে হবে।
  • সকালের খাবার বা নাস্তা করতে হবে।
  • মনে রাখবেন কোরবানির পশুর যাতে খাবারের কোন সমস্যা না হয়।
  • একজন ভালো হুজুরকে আনতে হবে কোরবানি করে দেওয়ার জন্য। ( মসজিদের ইমাম )
  • কোরবানি করার স্থান পরিস্কার পরিছন্ন করতে হবে।
  • কোরবানি করার স্থানে গর্ত খুরে নিতে হবে যাতে সেখানে কোরবানির পশুর রক্ত জমাট থাকতে পারে।
  • সব শেষে কোরবানির পশু কে রশির সাহায্যে শুয়াতে হবে । 
  • তারপর সেখানে কোরবানির পশুর গলা বরাবর গর্ত রাখতে হবে।
  • তারপর কোরবানি করার জন্য পশু প্রস্তুত হলে একজন ভালো হুজুর দ্বারা কোরবানি সম্পুর্ন করতে হবে। 
  • কোরবানি শেষ হলে কোরবানির পশুর চামড়া ফকির মিসকিন কে দিতে হবে । আপনি চাইলে সেই চামড়া বিক্রি করে টাকা দিতে পারেন।
  • তার পর পরবর্তী কি কি করতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো।

কোরবানির পশুর মাংস ভালো করে ভাগ করার নিয়ম ঃ

কোরবানির পশুর মাংস আমরা জানি ৩ ভাগ করতে হয়। প্রথম ভাগ নিজের জন্য দ্বিতীয় ভাগ আত্নীয় স্বজনের জন্য আর তৃতীয় ভাগ প্রতিবেশিদের জন্য। আপনি যদি এইভাবে সঠিক করে ভাগ করতে পারেন তাহলে আপনার কোরবানি ইনশাআল্লাহ কবুল হয়ে যাবে। আর যদি আপনি কোরবানির মাংস সঠিক ভাবে বন্টন করতে না পারেন মানে অনেকেই কোরবানির মাংস ভাগ করার সময় সেখানের মাথা 

বা পা  এমনিতেই নিয়ে থাকে এটা জায়েজ নই। কোরবানির পশুর মাংস ভাগ করতে হবে সঠিক ভাবে সঠিক অনুপাতে। আমরা অনেকেই কোরবানি করার সময় অনেক ভুল করে থাকি যেগুলো করা আমাদের জন্য উচিত নয়। যেমন- শরিকের মাংস বন্টন আমরা অনেকেই কয়েকজন মিলে কোরবানি দিয়ে থাকি। সেটা হতে পারে ৩ জন বা ৭ জন। 

আমরা কি করি কোরবানির মাংস ৪ ভাগ করি । এটা উচিত নয় আমাদের কোরবানির পশুর মাংস ৩ ভাগ করতে হবে । আবার অনেকেই কোরবানির মাংসের সাথে হাড্ডি পা ইত্যাদি অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ নিয়ে থাকি এগুলো করা মোটেও ঠিক নয়।

শরিক কোরবানি দেওয়ার সতর্কতা ঃ

আমরা অনেকে আর্থিক ভাবে অসচ্ছল হওয়ার কারনে কয়েকজন মিলে কোরবানি দিয়ে থাকি। এই কোরবানি গুলো দেওয়ার নিয়ম একটাই তবে অনেক রিস্ক আছে ।  আমরা নিচে শরিক কোরবানির কিছু সতর্কতা দিয়েছি সেগুলো যদি আপনি পালন করতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার কোরবানি কবুল হবে। নইতো না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
  • শরিক যতজন হবে সবারই হালাল ‍উপার্জন থাকতে হবে ।
  • কোরবানির মাংস খাওয়ার নিয়তে কোরবানি দিলে কোরবানি হবে না।
  • কোরবানির মাংস সঠিক ভাবে বন্টন করতে হবে।
  • কোরবানির পশু মোটাতাজা ও ভালো হতে হবে।
  • কোরবানির মাংস সঠিক ভাবে গরিবদের মাঝে বিলি করতে  হবে।
  • কোরবানি করার খাছ নিয়ত রাখতে হবে।
  • কোরবানির সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।
এই সকল নিয়ম কানুন যদি মেনে কোরবানি করা হয় তাহলে আশা করা যায় কোরবানি আল্লাহর নিকট কবুল হবে। আর যদি কোরবানি করতে কোথাও কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন তাহলে আপনার কোরবানি নাও হতে পারে। তাই সঠিক ভাবে কোরবানি করতে হবে। 

অহংকার বা লোক দেখানোর জন্য কোরবানি করা ঃ

অহংকার বা লোক  দেখানোর জন্য কোরবানি করলে সেই কোরবানি কবুল হবে  না। আমাদের সমাজে ইদানিং অনেকে এই লোক দেখানোর জন্য কোরবানি করে থাকে। যদিও এই কোরবানি তার জন্য কোন সওয়াব আনতে পারবে না। তার কারন আল্লাহ স্পষ্ঠ ভাবে বলেছেন যে ব্যক্তি অহংকার বা লোক দেখানোর জন্য কোরবানি করে তার কোরবানি কবুল  হবে না।

আমাদের নবী করিম (সঃ) এই বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তাই আমরা যদি কোরবানি করতে চাই তাহলে সর্বপ্রথম আগে আমাদের নিয়ত ঠিক রাখতে হবে। তার পর কোরবানি আর হ্যা কোরবানি সবার জন্য ফরজ না । যার সামর্থ আছে শুধু তার জন্য কোরবানি করা ফরজ আর যার সামর্থ নেই তার কোরবানি করার কোন প্রয়োজন নেই। কোরবানি হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি মাধ্যম।

আবার যদি কোন গরিব অসহায় মানুষ কোরবানি দিতে চাই তাহলে তার জন্য অনেক সতর্কতা রয়েছে। তাই আসুন আমরা যারা কোরবানি করতে চাই তাহলে উপরের নিয়ম গুলো ভালো ভাবে মেনে চলার চেষ্টা করুন। তাহলে মহান আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করবেন এবং আমরা কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকিট্য লাভ করতে পারবো।

শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমি সব সময় চেষ্টা করি আপনাদের ভালো কিছু লেখা শেয়ার করতে। জানি না কতটুকু পারি তবে আমার এই ক্ষুদ্র মেধায় যা পারি আমি আপনাদের সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করি। আজ এতটুকুই আসছি পরের কোন ভালো আর্টিক্যালে ততক্ষন আপনারা ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই কামনায় করি। আর যদি আমাদের এই আর্টিক্যালটি আপনার পছন্দ হয় তাহলে আমাদের এই আর্টিক্যালটি সবার মাঝে শেয়ার করুন । (আল্লাহ হাফেজ)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url