শবে অনেক ফজিলত পুর্ন একটি রাত। এই রাত মুসলিমরা গুনাহ মাফের রাত হিসাবে মানে । তাই আপনি যদি একজন ভালো মুসলিম হতে চান তাহলে আপনার জানা উচিত শবে বরাতে ফজিলত ও শবে বরাতে করনীয় ও বর্জনীয় কিছু আমল।
তাই আজ আমরা আপনাদের জানাতে চলেছি শবে বরাতের ফজিলত - শবে বরাতে করনীয় ও বর্জনীয় আমল সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ শবে বরাতের ফজিলতপোষ্টসূচিঃ
শবে বরাতের ফজিলত
আমরা যদি শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারি তাহলে আমাদের এই শবে বরাতের রাতে আমল করতে অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমরা জানি শবে বরাত কতটা গুরুপ্তপুর্ন রাত আল্লাহর ইবাদত করার জন্য । এই রাতে ইবাদত করলে এবং দোয়া করলে মহান আল্লাহ তায়ালা সেটি কবুল করেন ।
তাই শবে বরাত কে বলা হয় গুনাহ মাফের রাত বা ক্ষমা পাওয়ার রাত। আমরা জানি বছরে তিনটি দিন রয়েছে যে গুলো হলো ঃ শবে মেরাজ, শবে বরাত ও শবে কদর। এই তিনটি রাত বছরের প্রত্যেকটা দিনের চেয়ে অধিক উত্তম । তাই এই তিনটি রাতে মুসলিমরা রাত জেগে ইবাদত বন্দেগিতে শরিক হয়ে থাকেন।
আমরা জানি আরবি সাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত কে শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত বলা হয়। এটি অনেক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। মহান আল্লাহ এই রাতে তার রহমতের দরজা খুলে দেন এবং ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকেন।
আমরা যদি এই তিনটি রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে রাত জেগে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করি তাহলে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের দোয়া কবুল করবেন এবং আমাদের ক্ষমা করে দিবেন ইনশা আল্লাহ । তাই এই রাতের ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না।
মহান আল্লাহ আমাদের জন্য গুনাহ মাফের এই সুবর্ন করে দিয়েছেন। এই রাতে আমাদের উচিত বেশি বেশি নামাজ পরা। এবং নিরবে বসে যিকির করা এবং আমাদের কৃত গুনাহ এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। তাহলে আমরা এই রাতের মাধ্যমে ক্ষমা পেতে পারি।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস কি বলে
শবে বরাত বিষয়ে হাদিসে আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্নিত- তিনি বলেন,
‘একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং দির্ঘ সময় ধরে সেজদা করেন, আমার মনে হলো- তিনি হয়তোবা মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি দাড়িয়ে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে নারাচারা করলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ে উঠল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ পরিপুর্ন করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন, আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, মহান আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন ? আমি উত্তরে বলে উঠলাম, নাহ আল্লাহর রাসুল। আপনার দেরিতে সেজদা করার কারনে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না তা।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বলতে লাগলাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো করে বিষয়টা জানেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত ( অর্থাৎ শবে বরাত)। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি খুব মনোযোগ দেন এবং যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের ক্ষমা করেন এবং যারা অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই বুজতে পারছ।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩; তাবারানি: ১৯৪)
আরো বহু হাদিস দ্বারা প্রমানিত এই শবে বরাত রাত মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ রাত। যারা এই শবে বরাত রাতে আল্লাহ তায়ালার কাছে তাদের গুনাহ মাফের দোয়া করবেন আল্লাহ তায়ালা সেটি কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।
শবে বরাতের গুরুপ্ত ও ফজিলত
শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত এর গুরুপ্ত ও ফজিলত প্রত্যকটা মুসলিমের জানা থাকা উচিত। তার কারন এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ একটি রাত যা অন্যন্য রাতের থেকে আলাদা। আমরা আপনাদের ইতিমধ্যই কয়েকটি হাদিস পেশ করেছি যা দ্বারা এটা প্রমানিত হয় যে, এটি অর্থাৎ শবে বরাত
রাত মুসলিমদের জন্য অধিক ফজিলত পুর্ন একটি রাত। এই রাতে কেউ যদি ইবাদত বন্দেগি করে এবং তার কৃত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের দোয়া করে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার সমস্ত আশা আকাংখা পুরন করবেন।
হাদিসে আছে আমাদের মহানবি (সঃ) এই রাতে খুব বেশি আল্লাহর ইবাদত করতেন এবং রোজা রাখতেন এবং আল্লাহর কাছে উম্মতের জন্য প্রার্থনা করতেন। তাই আমাদের ও উচিত মহান আল্লাহর কাছে এই রাতে বেশি বেশি আমল করা এবং আমাদের সমস্যা গুলো সহ আমাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
যদি আমরা এই রাতকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর তায়ালার আমল অর্থাৎ ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়ে দেই তাহলে হইতো মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন। এবং আমাদের বাকি জীবন সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারবো।
শবে বরাতে করনীয় ও বর্জনীয় আমল
আমরা এতক্ষন শবে বরাতের গুরুপ্ত ও ফজিলত সম্পর্কে জানলাম। তাই এখন আমরা জানবো শবে বরাতের রাতে করনীয় ও কিছু বর্জনীয় আমল সম্পর্কে। আমরা শবে বরাত রাতে যে আমল গুলো বেশি বেশি করবো তা নিচে দেওয়া হলোঃ
- শবে বরাত রাতে আমরা বেশি বেশি কোরআন শরিফ পড়বো।
- শবে বরাত রাতে আমরা বেশি বেশি যিকির করার চেষ্টা করবো।
- রাকাত একটু দীর্ঘ করে আমরা বেশি বেশি নফল নামাজ পরবো।
- শবে বরাত রাতে আমরা তাহিয়াতুল তাসবিহ পরার চেষ্টা করবো।
- বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবো।
- কান্না করে আল্লাহর কাছে আমাদের ফরিয়াত জানাবো।
- যদি আমাদের পরিবারের কেউ মৃত্যুবরন করেন তার জন্য এই শবে বরাত রাতে আমরা দোআ করবো।
আমরা যে কাজ গুলো শবে বরাত রাতে করবো না
- শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে কোন জনবল সমাবেশ করা যাবে না।
- শবে বরাত রাত কে কেন্দ্র করে কোন আয়োজন করা যাবে না। এগুলো নিষিদ্ধ তার কারন এটি ইবাদতের রাত।
- শবে বরাত রাতে গরু মহিষ জবেহ করে খাওয়ার আয়োজন করা যাবে না।
- শবে বরাত রাতে হালুয়া রুটি করে মানুষ কে খাওয়ানো যাবে না।
- শবে বরাত রাতকে কোনভাবেই আনন্দ হয় হুল্লুর করা যাবে না।
- এই রাতে আতশবাজি বা পটকা ফোটানো যাবে না।
- শবে বরাত রাতে নামাজা বা আমল বাদ দিয়ে ঘুরা ফেরা করা যাবে না।
- শবে বরাত রাতে অনেক জন মিলে কোন কবরস্থানে যাওয়া যাবে না।
আমরা এতক্ষন জানলাম শবে বরাত রাতে যে কাজ গুলো করা যাবে না এবং যে কাজ গুলো শবে বরাত রাতে বেশি বেশি করা যাবে।
শবে বরাতের রাতে রোজা পালনের নিয়ম আছে কি
আমরা ইতিমধ্যই শবে বরাতের রাতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জেনেছি তাই এখন আমরা জানবো শবে বরাতের রাতে রোজা পালনের কিছু নিয়ম সম্পর্কে-
অনেক হাদিস দ্বারা প্রমানিত যে, রমজানের রোজা যেভাবে রাখা হয় ঠিক একই ভাবে রোজা রাখতে হবে এর কোন আলাদা নিয়ম নেই । আমাদের উচিত রমজানের আগে সাবান মাসের মধ্যবর্তি সময়ে তিনটি রোজা রাখা এতে আমাদের অনেক ফায়দা রয়েছে।
শবে বরাতের রোজা যে পালন করতেই হবে এমন কোন সহিহ হাদিস নেই তবে বিভিন্ন হাদিসের ইশারায় জানা যায় এই শবে বরাতে রোজার বরকত রয়েছে আমাদের বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ও এই সাবান মাসে রোজা রাখতেন। তাই যদি কেউ এই শবে বরাতে তিনটি রোজা রাখতে পারেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তার জন্য কল্যান রেখেছেন।
শবে বরাতে কয়টি রোজা করতে হয়
বিভিন্ন হাদিস দ্বারা জানা যায় সবে বরাত উপলক্ষে তিন রোজা করতে হবে। আমরা জানি সাওম পালনের সময় সাধারণত রমজান মাসে হয়ে থাকে কিন্তু এই সাওম বা রোজার মাসের আগেই আমাদের মহানবি (সঃ) প্রস্থুতি নিতে বলেছেন।
যদি আমরা বিভিন্ন হাদিস পড়ি তাহলে জানতে পারবো এই শবে বরাতে কয়টি রোজা রাখতে হবে। তবে সময়ের কারনে আমরা হাদিস গুলো পেশ করতে না পারার কারনে দুঃখিত। আমাদের উচিত এই শবে বরাতে রোজা রাখা।
শেষ কথা
আমরা আজ শবে বরাতে ফজিলত - শবে বরাতে করনীয় ও বর্জনীয় আমল সম্পর্কে সম্পুর্ন একটু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আশা করি শবে বরাতের এই আর্টিক্যাল টি আপনারা বুজতে পারছেন আর যদি বুজতে বা কোন অভিযোগ থাকে তাহলে কমেন্ট করতে পারেন ইনশাআল্লাহ খুব শিঘ্রই আমি আপনার কমেন্টের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং টেকমাইবিডির সাথেই থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url