ন্যানো টেকনোলজি কি | What is nanotechnology?

 ন্যানো হলো আসলে একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ হোল বামন। প্রচলিত বাংলায় খাটো আকৃতির লোককে আমরা বলি বামন আকৃতি। ন্যানো বলতে বোঝাত কোন জিনিষের একশ কোটির এক ভাগ অংশকে, তাহলে বুঝে নিন এই প্রযুক্তিতে বামনত্ত কতটা। ন্যানো একটি মাপার একক।উদাহরন হোলঃ এক মিটার দীর্ঘের কোন বস্তুর একশ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলে ন্যানমিটার। যে সব কনার দৈর্ঘ্য ১-১০০nm সেগুলোকে ন্যানো পার্টিকেল বলে। ১৯৫৯ সালের ২৯ জানুয়ারি  অনুষ্ঠিত আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির এক সভায়  শীর্ষক এক বকৃতা দেন। এই বক্তিতাটি সর্বপ্রথম ন্যানোপ্রযুক্তির ধারণা দেয়।তার বক্ত্যবের মুল কথা ছিল ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়ার সমস্ত লেখাকে ছোট করে পঁচিশ হাজার ভাগের এক ভাগে নিয়ে আসা সম্ভব। এ জন্য তিনি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের কথাও উল্লেখ করেন। এইসব চিত্তাকর্ষক গবেষণার ফল হোল ন্যানো টেকনোলজি। ন্যানো বস্তু তিন ধরনের হয়ে থাকে 


   যেমন

    ১) প্রাকিতিক অর্থাৎ প্রকৃতি লব্ধ ।

   ২) ইন্সিডেন্টাল অর্থাৎ পরিবেশে পাওয়া যায় যেমন ধোঁয়া ।

  ৩) ইঙ্গিনিয়ারড অর্থাৎ ন্যানো কনা গবেষকদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় তৈরী। এইবার একটু অনু, পরমানু এবং            ন্যানোর তুলনা দেখুন।


কতো বড় এই “ন্যানো”?

আপনার স্মার্টফোন বা যেকোনো ক্যামেরা ব্যবহার করে একটি ফটো ক্যাপচার করুন এবং সেটাকে ফটোশপ দিয়ে ওপেন করুন। এবার ফটোটিকে জুম করতে থাকুন, দেখবেন জুম করতে করতে ফটোটি একসময় ঘোলা হয়ে যাবে এবং পরিশেষে শুধু চারকোনা ইটের দেওয়ালের মতো দেখতে পাওয়া যাবে। এই প্রত্যেকটি চারকোনা ব্লক গুলোকে এক একটি পিক্সেল বলা হয়, যা কোন ফটোর বর্ণনা ধারণ করে এবং একত্রে সকল পিক্সেল গুলো মিলে একটি সম্পূর্ণ ফটো তৈরি হয়। ঠিক একই ভাবে আপনার চারপাশের সমস্ত কিছু সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়েছে অতি ক্ষুদ্র উপাদান “পরমাণু” দ্বারা। চেয়ার টেবিল থেকে আরম্ভ করে আপনার শরীর পর্যন্ত পরমাণু নামক অতি ক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা গঠিত। প্রত্যেকটি পদার্থের পরমাণুতে তার গুনের এক একটি অংশ বর্ণিত থাকে, যেমনটা কোন ফটোর প্রত্যেকটি পিক্সেলে বিভিন্ন কালার থাকে এবং একত্রে একটি ফটো তৈরি হয়। ন্যানো টেকনোলজির মূল বিষয় বস্তু এর উপরই নির্ভর; তাহলো পদার্থর গঠন এবং এর অণু, পরমাণুর গঠন এবং বৈশিষ্ট্য—এ ব্যাপার নিয়ে আরো পরে আলোচনায় আসবো, এখন ন্যানো এর আঁকার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক।

 ন্যানো অনেক ছোট হলেও এটি কিন্তু একটি সিঙ্গেল অ্যাটমের তুলনায় বড়। একটি অ্যাটমের ব্যাসরেখা প্রায় ০.১ ন্যানো মিটার এবং একটি অ্যাটমের নিউক্লিয়াস (অ্যাটমের ঠিক মাঝখানের একটি ঘন এলাকা যেখানে প্রোটন এবং নিউট্রন থাকে) আরো ছোট আকারের হয়ে থাকে, যেটা প্রায় ০.০০০০১ ন্যানো মিটার। বিজ্ঞান বিভাগের পটু আর গনিতের তুখারেরা এতক্ষণে ন্যানো মিটার এবং এর আঁকার সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন, তবে সকলের বোঝার জন্য আরেকটি উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করি। মনে করুন আপনার হাতে একটি অ্যাপেল রয়েছে এবং ধরে নিন এটা ১ ন্যানো মিটার, তাহলে এটি কতো ছোট? ১ মিটারের সাথে ১ ন্যানো মিটারের তুলনা করতে গেলে, আপনার হাতের অ্যাপেলটি যদি এক ন্যানো মিটার হয় তবে এই সমস্ত পৃথিবী হবে এক মিটার, বুঝতে পাড়লেন?

আপনি হয়তো আপনার জীববিজ্ঞান বইয়ের অতি ক্ষুদ্র পরজীবী কীটবিশেষ এর ছবি দেখে আশ্চর্য হয়ে থাকেন, হয়তো ভাবেন এতো ছোট জিনিসের ছবি কীভাবে উঠানো সম্ভব হয়। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ (অতি ক্ষুদ্র বস্তু দেখার যন্ত্র) ব্যবহার করে এই ধরনের ফটোগ্রাফি করা হয়ে থাকে। এই অসাধারণ বিজ্ঞানের যন্ত্রটি এক মিটারের মিলিয়ন গুন ছোট বস্তু দেখতে পারে অর্থাৎ ১ মাইক্রোস্কোপিক মিটার সমান ১ মিটারের ১ মিলিয়ন (১০ লক্ষ) গুন ছোট ভার্সন। কিন্তু ন্যানো মানে হলো ১ মিটারের ১ বিলিয়ন (১, ০০০ মিলিয়ন) গুন ছোট। তো ন্যানো মিটার কতটা ক্ষুদ্র হতে পারে কল্পনা করতে পারছেন? 

ন্যানো স্কেল

  • অ্যাটম; ~০.১ ন্যানোমিটার।
  • অনুতে পরমাণু; ~০.১৫ ন্যানোমিটার অংশ জুড়ে থাকে।
  • আদর্শ প্রোটিন; ~১০ ন্যানোমিটার লম্বা।
  • কম্পিউটার ট্র্যানজিস্টর (যা দ্বারা কম্পিউটার প্রসেসর বা মেমোরি তৈরি হয়); ~১০০-২০০ ন্যানোমিটার প্রশস্ত।
  • আদর্শ ব্যাকটেরিয়া; ~২০০ ন্যানোমিটার লম্বা।
  • মানুষের চুল; ৫০, ০০০-১০০, ০০০ ন্যানোমিটার ।
  • একটি কাগজ; ~১০০, ০০০ ন্যানোমিটার পাতলা।
  • একটি মেয়ে ১.২ মিটার (৪ ফুট) লম্বা; ~১, ২০০ মিলিয়ন ন্যানোমিটার লম্বা।

ন্যানো ম্যাটেরিয়াল

হতে পারে বর্তমানেই আপনি অলরেডি ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করছেন। হতে পারে আপনি ন্যানোটেকনোলজি প্যান্ট পরিধান করে আছেন কিংবা আপনার শার্টটি ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি। এমনকি হতে পারে আপনার বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ট্র্যাভেলিং বাগটিও ন্যানোটেকনোলজিতে প্রস্তুত। ন্যানোটেকনোলজিতে তৈরি কাপড় গুলোর তন্তু এতোটাই সূক্ষ্ম যে এতে ধুলি বালু কণা আটকে থাকতে পারে না, ফলে কাপড় অনেক কম নোংরা হয়। কিছু ব্র্যান্ডের সানস্ক্রীন  ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়, এতে ক্রিমটি আপনার স্কিনে লাগানো মাত্র এটি টাইটানিয়াম অক্সাইড অথবা জিঙ্ক অক্সাইডের আস্তরণ ফেলে দেয় এর ফলে এটি সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মিকে ব্লক করে দেয়। 

ন্যানো চিপ

মাইক্রো ইলেক্ট্রনিক্স হলো ন্যানো টেকনোলজির আরেকটি রুপ। সাধারনত মাইক্রো ইলেক্ট্রনিক্সে “মাইক্রো” শব্দটি ব্যবহার করা হয় কারণ এর আঁকার মাইক্রোস্কোপিক স্কেলের হয়ে থাকার কারণে। কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা উদ্ভবন করেন যে, একই জায়গার মধ্যে বেশি ট্র্যানজিস্টর আটাতে পারলে কম্পিউটারের সাইজ আরো ছোট এবং বেশি পাওয়ারফুল বানানো সম্ভব। আর এর জন্যই আজকের কম্পিউটার গুলো সাইজে অনেক ছোট, অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সস্তা মুল্যের হয়ে থাকে। বর্তমানে কম্পিউটার প্রসেসর ১০০-২০০ ন্যানোমিটারের ট্র্যানজিস্টর দ্বারা প্রস্তুত হয়ে থাকে এবং দিনদিন এর সাইজ আরো কমানো হচ্ছে আর এই সবই সম্ভব হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজির ফলে।

শুধু কম্পিউটার প্রসেসর নয়, বরং ফ্ল্যাট স্ক্রীন এচডি টিভি, স্মার্টফোন, আইপড ইত্যাদি সব গুলোতেই ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে চিপ লাগানো থাকে।

ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে?

কম্পিউটার বা মোবাইল হলো ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করা ডিভাইস। আশাকরি ধারনা করতে পারছেন যে কতদিক থেকে ন্যানো টেকনোলজি আমাদের কাজে আসে। চলুন দেখি ন্যানো টেকনোলজি ব্যাপারটা কি ?

১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানো মিটার। আর এ ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে।

ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগক্ষেত্র

  • ১। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরি
  • ২। ন্যানো রোবট
  • ৩। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি
  • ৪। জালানি তৈরিতে
  • ৫। প্যাকেজিং ও প্রলেপ তৈরি
  • ৬। ঔষধ তৈরি
  • ৭। খেলাধুলার সামগ্রী
  • ৮। মহাকাশ অভিযান
  • ৯। বস্ত্র শিল্প
  • ১০। কৃত্তিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url