১৯৯৬ সালের নির্বাচন | Election in 1996

 ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । তখন বিএনপি সরকার একপেশ সাধারন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিরোধি দল আওয়ামিলীগ তখন তুমুল হামলা চালাচ্ছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে । হরতাল, অবরোধ, অগ্নিসংযোগ এবং হামলা ঘটনায় দেশ তখন বিপর্যস্তপোষ্টসূচিঃ 



      ১৯৯৪ সালে মাগুরায় একটি উপনির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন শুরু করে ।  বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে আওয়ামী লীগ । 

 আন্দোলন শুরুর নয় মাসের মধ্যেই জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা । এদের মধ্যে পদত্যাগ করেন জামায়েত ইসলাম ও জাতীয় পার্টির এমপিরা ।   ১৯৯৫ সালের পুরো বছরজুড়ে হরতাল এবং অবরোধসহ নানা রাজনৈতিক কর্মসূচী দেয় আওয়ামী লীগ । 

১৯৯৫ সালের পুরো বছরজুড়ে হরতাল এবং অবরোধসহ বিভিন্ন রকমের রাজনৈতিক কর্মসূচী দেয় আওয়ামী লীগ ।  ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করতে থাকেন । 

খালেদা জিয়া যেখানে সমাবেশ করতে যাচ্ছিলেন সেখানেই হরতালের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ । এতে বিভিন্ন সমাবেশ নষ্ট হয় বিএনপির ।   খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা ফেনীতে সমাবেশ করতে গেলে সেখানেও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েন । সেখানে বিরোধী দলগুলো হরতালের ডাক দেয় এবং কালো পতাকা প্রদর্শন করে ।

  কূটনীতিকদের টহল 

 ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড এন মেরিল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছেন । কিন্তু তাতে রাজনৈতিক বিবাদের কোন সমস্যা সমাধান হয়নি ।   বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে তখন আড়ালে রাজনৈতিক আলোচনা চলছে মাঝেমধ্যে ।   

আড়ালে দুপক্ষের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত । দুপক্ষের মধ্যে বৈঠক হলে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেবার আলোচনা হয় ।   এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে এবং ৭ই ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করা হয় ।

 জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী লীগের তিন নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এবং মোহাম্মদ নাসিম রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সাথে দেখা করা হয় ।   রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য তারা সরকারকে আহবান জানান । সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকার কারণে সংকটের সমাধান হচ্ছে না । 

 সমাধানের আশা শেষ 

 নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল ততই সমঝোতার আশা শেষ হয়ে যাচ্ছিল ।  তখন অনেকে ধারণা করেছিলেন যে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হবে ।  কিন্তু আওয়ামী লীগ জানায় যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি সমাধান না হলে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিয়ে লাভ হবে না । 

এমন সংকট সমাধানের জন্য খুব চেষ্টা করছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড এন মেরিল ।  আবার ঐ দিকে বিএনপি রাষ্ট্রপতির অধীনে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে প্রেসিডেন্টের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা দেবার দাবি জানিয়েছিল । নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরা বলা হয়, নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন । 

 খুব দ্রুত আরেকটি নির্বাচনের ইঙ্গিত  

একদিকে সমঝোতার অব্যহত, অন্যদিকে নির্বাচন করার জন্য বিএনপি সরকারের এগিয়ে আসছে এবং রাস্তায় আওয়ামী লীগের বিশাল আন্দোলন ।  এই অবস্থায় ২৪শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন । 

ভাষণে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনের মাধ্যমে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হবে যাতে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে । খালেদা জিয়ার ভাষণে বোঝা যায়, নির্বাচনের পরে দ্রুত আরো একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং হয়তো বিরোধী দলের দাবি মেনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও প্রতিষ্ঠা করা হবে । খালেদা জিয়া বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে সাংবিধানিকভাবে কোন নির্বাচিত সরকার থাকবে না ।  

 কূটনীতিকদের আবারো চাপ ও চেষ্টা

  ঢাকায় পৌছে মি. রিচার্ডসন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করেন । তখন বিভিন্ন সংবাদপত্রের রিপোর্টে জানা যায়, রাজনৈতিক সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য মি. রিচার্ডসন উভয়পক্ষকে তাগাদা করেছেন ।   বাংলাদেশ ছেড়ে যাবার আগে বিমানবন্দরে তিনি বলেন, ” কোন রকম শর্ত ছাড়াই অবিলম্বে দুই দলের মধ্যে সংলাপ শুরু করা প্রয়োজন ” ।   মি. রিচার্ডসন ঢাকা ছেড়ে যাবার কয়েকদিন পরে ছয়টি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররা আবারো আলোচনা ও বৈঠক করেন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে । 

  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু  

অবশেষে ১৯৯৬ সালের ১৯ শে মার্চ বাংলাদেশে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম যে অধিবেশন শুরু হয়, তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এর অন্তর্ভুক্ত করা । ২৪শে মার্চ রাতে জাতীয় সংসদে সংবিধানে যুক্ত করার জন্য বাছাই কমিটির রিপোর্টসহ বিলটি উত্থাপন করা হয় ।

 ২৬ শে মার্চ ভোররাতে বহুল আলোচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল সংসদে পাশ হয় ।   তখনও বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন চালাতে থাকে । এর সাথে যুক্ত হয় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা । তাদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের গঠিত জনতার মাঝে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করে । 

রাজনীতির মাঠে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য বিএনপি তাদের অফিসের সামনে গঠন করে গণতন্ত্রের মঞ্চ । খালেদা জিয়ার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে দেরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ । এই পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের ৩০ শে মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন এবং ৬ষ ্ঠ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয় । আর এটাই ছিল তাদের বড় ভুল । 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার শপথ গ্রহণ করেন সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ।   সে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে ৭ম জাতীয় সংসদের নির্বাচন আয়োজন করে যার মাধ্যমে ২১ বছর পরে ক্ষমতায় আবারও ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url